পরিকল্পনা হতে খুবই আশাপ্রদ ফল লাভ করা গেলেও এটি অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে এ কথা বলা যায় না । সাধারণভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সময় এরূপ সমস্যা দেখা দেয় । এরূপ সীমাবদ্ধতাসমূহ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. পটভূমি বা অঙ্গন নির্ধারণে সমস্যা (Problems in premising) : যে অবস্থার মধ্য দিয়ে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে তাকে পরিকল্পনার পটভূমি বা অঙ্গন বলে । ভবিষ্যৎ অবস্থা কী দাঁড়াবে তা সম্পূর্ণ অনুমান করা কষ্টসাধ্য । এজন্য পরিকল্পনার বাস্তবায়নকে প্রভাবিত করতে পারে এমন ভবিষ্যৎ অবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয় । কিন্তু অনেক সময় প্রাপ্ত তথ্যাদি নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য হয় না । সে কারণে সঠিক পটভূমি নির্ধারণ কঠিন হয় ।
২. সময়সাপেক্ষ (Time consuming) : সাধারণত বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়িক জটিলতা ও কার্যকলাপের আধিক্যহেতু পরিকল্পনা প্রণয়নে অত্যধিক সময় বিনষ্ট হয়। এ ছাড়া তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ, বিকল্প নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় বেশি লাগে । যা অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হয় ।
৩. ব্যয়সাপেক্ষ (Costly) : পরিকল্পনা অনেক সময় ব্যয়সাপেক্ষ হয় । অনেক সময় পরিকল্পনার খরচ অপেক্ষা এ হতে অর্জিত ফলাফল কম হয় । অনেক সময় পরিকল্পনা দক্ষতা অর্জনে কোনো ভূমিকা রাখে না ফলে ব্যবসায়ে মিতব্যয়িতা অর্জিত হয় না । সরকারি পর্যায়ে ক্ষেত্রে বিশেষে এমন অনেক পরিকল্পনা নেয়া হয় যা ব্যয় বাড়ায় কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার সুফল দেখতে পাওয়া যায় না ।
৪. মানসিক সমস্যা (Mental hazard) : সংগঠনের কর্মীরা সহজাতভাবে প্রচলিত ধ্যান-ধারণা, রীতি- নীতিতে বিশ্বাসী । তারা ভবিষ্যতের চাইতে বর্তমানকেই উত্তম বলে মনে করে । তাই নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে জনশক্তির মধ্যে নিরুৎসাহ দেখা দেয়। এটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও সমস্যার সৃষ্টি করে ।
৫. উদ্যোগ গ্রহণে বাধাদান (Obstacle to initiative) : পরিকল্পনাকে সমালোচনা করতে গিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেন যে, পরিকল্পনা ব্যক্তির প্রতিভা বিকাশের অন্তরায়স্বরূপ এবং এটি ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে নিজস্ব মননশীলতায় ও ব্যক্তিগত চিন্তার পরিসরে কাজ করতে দেয় না । ফলে তা কর্মীকে উদ্যমহীন করে তুলতে পারে ।
৬. সংশোধনজনিত সমস্যা (Problem in correction) : পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রজ্ঞার অভাব, দক্ষতার অভাব, ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে সমস্যা ইত্যাদি কারণে পরিকল্পনা ত্রুটিযুক্ত থেকে যায় । এ ত্রুটি সংশোধনে অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয় ।
৭. আতিশয্যের প্রতি ঝোঁক (Tendency toward excessiveness) : পরিকল্পনা প্রণয়নকালে পরিকল্পনাবিদদের মধ্যে আতিশয্যের প্রতি বা বাড়তি কিছু করা যাবে এমন আশাবাদের প্রতি স্বাভাবিক ঝোঁক প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অতীতে কী হয়েছে তার বিবেচনার চাইতে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অতিরিক্ত আশাবাদ উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা গ্রহণে পরিকল্পনাবিদদের অনেক সময়ই উৎসাহিত করে । যা কার্যক্ষেত্রে সঠিক দিক- নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয় ।
৮. বাহ্যিক সমস্যা সমাধানে অক্ষমতা (Inability to resolve external problems) : কিছু কিছু বাহ্যিক সমস্যা সমাধানে একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা ফলপ্রদ হয় না। কারণ, বাহ্যিক সমস্যা বাহ্যিক পরিবেশ হতে উদ্ভূত হয়। যেমন- সরকারি আমদানি ও রপ্তানি নীতি, কর নীতি, শ্রমিক ইউনিয়নের প্রভাব ইত্যাদি ।
পরিশেষে বলা যায় যে, পরিকল্পনার অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থাপকদের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে তথ্য ও জ্ঞানের অভাব, যথাসময়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে ব্যর্থতা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্নমুখী জটিলতার কারণে পরিকল্পনা বাস্তবে কার্যকর ফল দিতে অনেক সময়ই ব্যর্থ হয় ।
আরও দেখুন...